গরমের দেশে কোনটা ব্যাবহার করব?
-"কেন? 5W-30"
"কিন্তু রেকোমেন্ডেড তো 0W-20"
-- "ওটাতো জাপানের জন্য।
আমাদের দেশ অনেক গরম। তাই "
আসুন দেখি ইঞ্জিনিয়াররা কি বলে।
-----------------------------------------------
(১) ভিস্কোসিটি কিঃ
ভিস্কোসিটি হলো একটা ফ্লুইড (লিকুইড) এর গড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা বা এটা কতটা গাড়/ঘন তা। বেশি ঘন ফ্লুইড এর ভিস্কোসিটি বেশি (গড়াবে কম – বেশি ভিস্কাস), কম ঘন বা পাতলা ফ্লুইড এর ভিস্কোসিটি কম (গড়াবে বেশি তাড়াতাড়ি – কম ভিস্কাস)।
ফ্লুইডের ভিস্কোসিটি তাপমাত্রার সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। বেশি তাপমাত্রায় ফ্লুইড পাতলা হয়ে যায় আর কম তাপমাত্রায় ঘন হয়। মানে হলো গিয়ে, বেশি তাপমাত্রায় ভিস্কোসিটি কমে যায়, আর কম তাপমাত্রায় ভিস্কোসিটি যায় বেড়ে।
(২) এস এ ই গ্রেডঃ
সোসাইটি অফ অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ারস (SAE – Society of Automotive Engineers) ভিস্কোসিটি গ্রেডিং এর একটা মেথড বের করেছে। তাই প্রতিটি ফ্লুইডের ভিস্কোসিটি লেখার আগে বা গ্রেড লেখার আগে SAE লেখা থাকে। এটা শুরু হয় 0 তে, আর শেষ হয় 60 এ। যেমনঃ SAE 20, SAE 30, SAE 40 ইত্যাদি।
নম্বর বা গ্রেড যত বেশি তত বেশি ভিস্কাস (বেশি ঘন – গড়াবে কম, ইঞ্জিনের ভিতরের দুই পার্টসের মাঝের ফাকের ভিতর তেল ঢুকতে দেরি হবে), আর নম্বর যত কম তত কম ভিস্কাস (পাতলা – গড়াবে বেশি, ইঞ্জিনের ভিতরের দুই পার্টসের মাঝের ফাকের ভিতর তেল ডুকবে তাড়াতাড়ি)।
তাহলে তো কম গ্রেডই ভাল, না কি বলেন? তাড়াতাড়ি ঢুকবে তেল, পার্টস পাত্তি ভাল থাকবে। সব সময় ব্যাপারটা ওরকম না, আর ওটা অন্য আলোচনা। পরে আরেকদিন আলোচনা করা যাবে, শুধু জেনে রাখুন, পুরনো গাড়িতে একটু ঘনটা (বেশি গ্রেডের) ইউজ করি আমরা। আগের মডেল গুলোও তাইই করি। কারণ গ্যাপ থাকত পার্টসের মধ্যে বেশি। কিন্তু এখন টেকনলোজির ঠেলায় গ্যাপ গুলো হয়েছে অনেক কম, এফিসিয়েন্সি বেড়েছে, তাই পাতলাটাই বেশির ভাগ গাড়িতে রেকোমেন্ড করে ম্যানুফ্যাকচারাররা। আগেই বলেছি, ওটা অনেক কঠিন আলোচনা, আরেকদিন হবে।
(৩) মাল্টি গ্রেড অয়েল কিঃ
ফ্লুইডের ভিস্কোসিটি তাপমাত্রার সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়।
তাই ম্যানুফ্যাকচারাররা বিভিন্ন এডিটিভ মিশায় যাতে এরকম ইঞ্জিন ওয়েল ঠান্ডা এবং গরম সব তাপমাত্রাতেই একই রকম ভিস্কাস থাকে। এগুলোকেই বলে মাল্টিগ্রেড অয়েল।
এই ইঞ্জিন অয়েল গুলো ২ টা এস এ ই গ্রেড দিয়ে লেখা থাকে।
যেমন,SAE 0W-20, SAE 5W-20, SAE 5W-30, SAE 10W-40 ইত্যাদি।
কিন্তু যদি এডিটিভ মিশানো না হতো তাহলে এই ইঞ্জিন অয়েল এর গ্রেড হতো SAE 20, SAE 30, SAE 40 ইত্যাদি।
(৪) এই নাম্বারগুলো দিয়ে কি বুঝায়ঃ
শুরু করব শেষের নাম্বারটি দিয়ে।
(৪.১) SAE 0W-20 এর 20 দিয়ে বুঝায় যে ইঞ্জিনের অপারেটিং টেম্পারেচার এ (যা কিনা ১০০ ডিগ্রির কাছাকাছি) এই ইঞ্জিন অয়েল SAE 20 গ্রেডের ভিস্কোসিটির মত আচরণ করবে বা SAE 20 এর ইঞ্জিন অয়েল যেরকম ভিস্কাস (পাতলা বা ঘন) সেরকম থাকবে। আর যদি লেখা থাকে SAE 15W-40 তার মানে হলো অপারেটিং (১০০ ডিগ্রি তাপমাত্রা) টেম্পারেচারে এই ইঞ্জিন অয়েল SAE 40 গ্রেডের মত ভিস্কাস (পাতলা বা ঘন) থাকবে।
তার মানে এই নম্বরটি একটা নির্দিষ্ট ইঞ্জিন অয়েলেরে অপারেটিং টেম্পারেচারে (১০০ ডিগ্রি তাপমাত্রা) কতটুকু ভিস্কাস তা উল্লেখ করে। নম্বর যত বেশি, তত ঘন, যত কম, তত পাতলা।
এর সাথে কিন্তু ঢাকার গরমকালের তাপত্রার কোন সম্পর্ক নেই।
(৪.২) উইন্টার নাম্বার বা শীতকালিন/ঠান্ডা নাম্বারঃ
SAE 0W-20 এর W এর আগের নাম্বারটিই উইন্টার নাম্বার। এটা দিয়ে বুঝায় যে শেষের নাম্বারটি যে গ্রেড এর ভিস্কাস, ঠান্ডায় বা শীতকালেও এই অয়েলটা একই রকম আচরণ করবে। শীতকাল না বলে বলা উচিত ইঞ্জিন যখন ঠান্ডা থাকে সেই তাপমাত্রা। কানাডা বা নিউ ইয়র্কে শীতকালে সকালে বাসা থেকে বেরুনোর সময় দেখলেন তাপমাত্রা -৫০ ডিগ্রি। ঢাকায় এই কাঠফাটা গরমে দেখলে দুপুর বেলা গাড়ি বের করার সময় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি। ২ টাই কোল্ড বা উইন্টার টেম্পারেচার। কেন? কারণ কোনটাই অপারেটিং টেম্পারেচার ১০০ ডিগ্রি না।
তাহলে শুরু নম্বরটি বিভিন্ন রকম কেন হয়? কি বুঝায় এটা দিয়ে।
শুরু নম্বর এর কম বেশি বুঝায় যে সর্বনিম্ন কত তাপমাত্রা পর্যন্ত এই ইঞ্জিন অয়েল অপারেটিং ভিস্কোসিটি গ্রেড এর মত আচরণ করবে।
উদাহরণ দিচ্ছি।
SAE 0W-20 মানে -৩৫ ডিগ্রি পর্যন্ত এই ইঞ্জিন অয়েল SAE 20 গ্রেডের মত ভিস্কাস থাকবে।
SAE 5W-20 মানে -৩০ ডিগ্রি পর্যন্ত এই ইঞ্জিন অয়েল SAE 20 গ্রেডের মত ভিস্কাস থাকবে।
SAE 25W-50 মানে -১০ ডিগ্রি পর্যন্ত এই ইঞ্জিন অয়েল SAE 50 গ্রেডের মত ভিস্কাস থাকবে।
(৫) সংক্ষেপে বলা যায়ঃ
(ক) SAE 0W-20
-৩৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা পর্যন্ত ব্যাবহার করা যাবে এবং ১০০ ডিগ্রি তে এটা (খ) এবং (গ) থেকে পাতলা।
(খ) SAE 0W-30
-৩৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা পর্যন্ত ব্যাবহার করা যাবে এবং ১০০ ডিগ্রি তে এটা (ক) থেকে ঘন।
(গ) SAE 5W-30
-৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রা পর্যন্ত ব্যাবহার করা যাবে এবং ১০০ ডিগ্রি তে এটা (ক) থেকে ঘন।
গরমের দেশের সাথে এগুলার তার মানে কোনই সম্পর্ক নেই। ঢাকা, শ্রীলংকা, জাপান, কানাডা, নিউ ইয়র্ক – যেখানেই যান না কেন। যদি লেখা থাকে SAE 0W-20, তাহলে এটাই ব্যাবহার করতে হবে।
*উল্লেখ্য, এখানে আমি যে তাপমত্রার কথা উল্লেখ করেছি তা কোল্ড ক্র্যাংকিং ভিস্কোসিটি মেথডে নির্ণয় করা হয়েছে।
leave a comment